একজন ফ্রিল্যান্সারের আর্তনাদ

হায় রে ফ্রিল্যান্সিং হায় রে অনলাইন ইনকাম!! শুরু টা হয় ভুল দিয়ে কিন্তু সময়ের সাথে বুঝতে পারে ভুল কোনটা আর সঠিক কোনটা তবে হাজার বার ঠকার পরে। তারপর নিজের ফ্যামিলি আর প্রতিবেশীদের অত্যাচারে তো বেচে থাকাই মুশকিল হয়ে দাড়ায়। এর মধ্যেই ঝরে পড়ে অনেকে। তার মাঝেই চেষ্টা করে যায় অনেকে আর ভাবে সফল হবই একদিন। রাতের ঘুম নষ্ট করে সময়ের অভাবে ২ বেলা না খেয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে মন দিয়ে কাজ করে যায় আর মনের মধ্যে বিশ্বাস রাখে একদিন না একদিন সফল হবই। সবার ভুল ধারনা ভাংবেই, দেখিয়ে দিব আমি কি পারি। এভাবেই survive করে যায় এই যোদ্ধারা। 


একজন ফ্রিল্যান্সারের আর্তনাদ

এরকমি আমারও ছোট্টো একটা গল্প। ২০১৫ সাল থেকেই ইচ্ছা কম্পিউটার, ইন্টারনেট নিয়েই নিজের ক্যারিয়ার গড়বো। জানতাম সহজ নয়। আমার এসব কথা শুনে কেউ আমার সামনেই হাসাহাসি করতো বা কেই পেছনে। আমি কিছু মনে করতাম না। আমি আমার মতো করে চলতাম। আমার কম্পিউটার ছিল না এখনও নেই। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর দারাজ থেকে একটা অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স কিনেছিলাম ২৩০০ টাকা দিয়ে আর ৯০০ টাকায় কীবোর্ড এবং মাউচ। বাড়িতে এল ই ডি টিভি ছিল। এটাই এখন চালাই। ২০১৫ সাল থেকেই আমার মোবাইল দিয়েই যখন যা পারতাম শিখতাম। টিভি বক্স কেনার পর পুরনো স্কিলস কাজে লাগিয়ে অনলাইন থেকে আয় করার চেষ্টা করেছিলাম। অনেক কিছু চেষ্টা করেছি কিছুতেই কিছু করতে পারিনি। 

এদিকে ইন্টার ফাস্ট ইয়ার এ science নিয়ে ভর্তি হয়েছি। ভেবেছি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব। কিন্তু এতো পড়া লেখার মাঝে অনলাইনে সময় দিতে পারছিলাম না। কিন্তু মনের মধ্যে ইচ্ছা গুলো ছিলই ১ ঘন্টাও সময় পেলে কাজ করতাম। আমার নিজের ইচ্ছা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার হবো। কিন্তু আমার কাছে তো কম্পিউটার নেই। তাতে কি হয়েছে অনলাইন অ্যাপ ইনভেন্টর তো আছে। আমার মোবাইল দিয়েই চেষ্টা করতাম তবে টিভি বক্স কেনার পর তা অনেক টা সহজ হয়েছে। আমার গুগল প্লে কনসোল অ্যাকাউন্ট ছিলো না। তাই আমার অ্যাপ আমার কাছেই থেকে যেতো। এবার খুব খারাপ লাগছিল। বাড়িতে কম্পিউটারের কথা বললে রেগে যেতো। আমার কাছে টাকাও ছিলো না যে গুগল প্লে কনসোল অ্যাকাউন্ট কিনবো। খুবই হতাশ ছিলাম। তবুও চেষ্টা করে যেতাম। 


তখনি Bluehost affiliate সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমি সব কিছুই প্রায় চেষ্টা করেছিলাম যেমন ব্লগিং, ওয়েব ডিজাইনিং, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট তাই হোস্টিং সম্পর্কে ভালোই জানতাম। তাই ভাবলাম এবার bluehost এর affiliate করি। ২০২০ সালের মে মাসে শুরু করি। ফেসবুক, টুইটার, টেলেগ্রাম, পিন্টারেস্ট না জানি আরও কতো সোসাল মিডিয়া তে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করতাম। ব্লগারে আরটিকেল লিখতাম। আমি নিজেও জানি না কি কি করেছি। আমার লিঙ্কে ক্লিক তো আসতো কিন্তু sale আসতো না। 


১৭০০-১৮০০ ক্লিক এসেছিলো কিন্তু একটাও sale হয়নি খুব হতাশ তবে হঠাৎ একদিন ইমেইল চেক করছিলাম একটা ইমেইল দেখে থমকে গেলাম মনে হচ্ছে এটা কি সত্যি না ভুল দেখছি। হ্যাঁ এটা bluehost affiliate এর ফাস্ট sale এর 65  ডলার আমার অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট এ অ্যাড হয়েছে। আমি তো খুব খুশি। পরের মাসে আরও ২ তা সেল হয়। তার মধ্যে দারাজে সেলার অ্যাকাউন্ট খুলে ইউটিউব ভিউ সেল করতাম সেখান থেকে ৪০০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। 

সেই টাকা দিয়ে গুগল প্লে কনসোল অ্যাকাউন্ট কিনেছি আর ছোট বোনকে ঈদে কাপড় কিনে দিয়েছি। এদিকে হঠাৎ করে একদিন দেখি আমার অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাক্টিভ করে দিয়েছে কারণ অনেক ক্লিক এসেছে তার তুলনায় খুব কম সেল হয়েছে তাই। আমার এতো কষ্ট সব নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু তখনও আমি থেমে যাইনি Bluehost affiliate এর team কে ইমেইল করে সব খুলে বললাম কি হয়েছে। ৩ দিন পর আমার অ্যাকাউন্ট আবার অ্যাক্টিভ করে দেয়। তাদের রুলস অনুয়ায়ী ৪৫ দিন পর আমার PayPal account এ ১৯৫ ডলার পাঠিয়ে দেয়। 


কিন্তু সমস্যা হল আমার PayPal account খোলা আমার আব্বুর পাসপোর্ট আর মোবাইল নাম্বার দিয়ে। আমার আব্বু কুয়েত থাকে কুয়েতে PayPal সাপোর্ট করে। কিন্তু আমার আব্বুর কোন ব্যংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই withdraw দিতে পারছি না। এদিকে আব্বুকে রাজি করিয়েছি যাতে আমাকে ২৫ হাজার টাকা দেয় ল্যাপটপ কেনার জন্য আমি নিজের ১৫ হাজার টাকা সহ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ল্যাপটপ কিনবো। হ্যা আমাকে ২৫ হাজার টাকা পাঠিয়েও দিয়েছে কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত PayPal থেকে এখনো withdraw দিতে পারিনি। তাই আর ল্যাপটপ কেনাও হচ্ছে না। অনেক এক্সচেঞ্জ সাইট দেখেছি কিন্তু কাউকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। যদি এই টাকা টা কেউ মেরে দেয় তাহলে ল্যাপটপ কেনা আর হবে না। তাই বড় ভাইদের কাছে হেল্প চাইছি আমার ডলার গুলা নিয়ে আমাকে বিকাশ বা ব্যংকে পেমেন্ট করুন। অনুগ্রহ করে আমাকে হেল্প করুন। 

ধন্যবাদ। 

Post a Comment

0 Comments